বিডিনিউজ ১০ ডেস্ক: ‘ওহে পান্থ!-/অতীতের সুখ-দুঃখ ভুলে যাও তুমি/ঐ যে ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে/সম্মুখে রয়েছে পড়ে/তোমার সে কর্মক্ষেত্র-মহারঙ্গ ভূমি।’ নতুন বছরকে নিয়ে ‘নববর্ষ’ কবিতায় এভাবেই বলেছিলেন মহাকবি কায়কোবাদ। নতুন বছর নিয়ে আসে নতুন বারতা।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। কোনো কিছুতেই পেছনে ফিরে যাবে না জীবন, যদিও আসে ছন্দপতন। তাই তো নববর্ষ নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’
ঠিক তাই প্রতিটি নতুন বর্ষে মানুষের নতুন করে আবির্ভাব ঘটে জীবনের পথে। সুন্দরের প্রত্যাশায় উদিত হয় নতুন সূর্য। স্বাগতম ২০১৯।
সোমবার রাত ১২টায় ঘড়ির কাঁটা শূন্যের ঘর অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গেই গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছরের। ২০১৮ সালের ফেলে আসা ক্লান্তি, হতাশা, ক্ষোভ, ভুল, দুঃখকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নতুন উদ্যমে পথচলার বাসনা নিয়ে পুবাকাশে উঠেছে ২০১৯ সালের সূর্য।
সব কুসংস্কার আর অপশক্তির বাধা জয় করে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাবে। এটাই আজ সবার প্রত্যাশা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অথনৈতিক, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে- এমন প্রত্যাশা প্রতিটি মানুষের।
ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটানা দশ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকায় তৃণমূলের জনগণ আজ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নতসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।
নতুন বছর কিংবা আসছে সময়গুলো কেমন যাবে, তা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা ভাবনা। কারণ, মাত্র একদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশ আরও এগিয়ে যাবে- পুরো দেশবাসীর এমন প্রত্যাশার সঙ্গে আছে কিছু সংশয়।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী বিরোধী দল একটি বিশেষ অঙ্গ। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সত্যিকার অর্থে তেমন কোনো বিরোধী দল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে সুধী মহলে। এখন সবার চোখ নতুন মন্ত্রিসভার দিকে।
আসছে মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, কারা থাকছেন না কিংবা কি ধরনের পরিবর্তন আসছে, তা নিয়ে সব পর্যায়েই কৌতূহল রয়েছে। কারণ উন্নয়নের নানা সূচকে দক্ষিণ এশিয়া তথা এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে পূর্ণ মুক্তির পাশাপাশি অন্ধকার, কুসংস্কার, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতার আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে- এমন স্বপ্ন দেশের জনগণের।
দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এখন আর শুধু দু’বেলা-দু’মুঠো খেয়ে জীবনধারণ নয়, প্রত্যাশা করেন উন্নত জীবন, যেখানে থাকবে না সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, কালোবাজারির থাবা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
এদিকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিল্পায়নের জন্য আরও বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। বাড়ানো দরকার আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা।
অবকাঠামো উন্নয়নের নামে চলা অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান চান সবাই। নতুন বছরের ৩০ মে থেকে ১৪ জুলাই ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৯ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের মানুষ আগে ছিল শুধু ফুটবলপ্রেমী। এখন বেশিরভাগের আগ্রহ ক্রিকেটে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন এক মহাশক্তির নাম। এই দুই মাস দেশের মানুষ ক্রিকেট-জ্বরে মেতে থাকবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবারের বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করে দেখাবে- এটা দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা।